জীবনবোধ, হারিয়ে ফেলা স্মৃতির বেদনা, জন্ম-মৃত্যুর আখ্যান, মনুষ্যত্বের স্বরূপ, রহস্য নিবিড়তা উন্মোচন করে কবি আবু জাফর খানের কবিতা। তার কবিতায় রয়েছে দর্শনজাত ভাষা ও আঙ্গিক-শৈলীতে নতুনত্বের ছোঁয়া। একটা স্ব-ভাষার সূচনা করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি, যা তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে। স্বভাবে আত্মমগ্ন, প্রকাশেও তাই, ধ্যানী-তপস্বীর মতোন তিনি। তার কবিতায় চিত্রকল্প একটি নিত্য অনুষঙ্গ বিষয় প্রকৃতি ঘেরা।

কবি আবু জাফর খানের কবিতা নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শুক্রবার (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত হয় ‘কবিতার অনুধ্যানে আবু জাফর খান’ শীর্ষক কবিতাসন্ধ্যা। বাংলাদেশ কবিতা মঞ্চ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বরকল্পন আবৃত্তিচক্র। আবহ সঙ্গীতে ছিলেন ধ্রুপদী রেকর্ডসের সালাহ উদ্দীন মাহবুব ও বংশীবাদক সুজন মিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি ফারুক মাহমুদ। অনুষ্ঠান সহযোগী ছিল ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ ও বেহুলাবাংলা।

বটবৃক্ষে পানি ঢেলে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিল্পী সমর মজুমদার, কবি ফারুক মাহমুদ, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী ও কবি বিমল গুহ।

কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খানের জন্ম পাবনার সুজানগর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। এ পর্যন্ত এককভাবে তার ১৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে (৭টি উপন্যাস, ৬টি কাব্যগ্রন্থ ও ১টি গল্পগ্রন্থ)। তাছাড়া যৌথভাবে দুই বাংলার কবিদের সঙ্গে ৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ‘বাংলাদেশ কবিতা সংসদ’ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক, রবীন্দ্র স্মারক সম্মাননা, আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে কথাসাহিত্যে (বাংলাদেশ) বাংলা সাহিত্য পদক, কলকাতা থেকে ড. বি আর আম্বেদকর সাহিত্য সম্মাননা, কলকাতা থেকে প্রকাশিত চোখ পত্রিকার পক্ষ থেকে চোখ সাহিত্য পদক, কবি জসীমউদ্দীন পরিষদ কর্তৃক পল্লীকবি জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক, ভারত থেকে নজরুল সাহিত্য স্মৃতি স্বর্ণপদক এবং মাইকেল মধুসূদন একাডেমি, ভারত থেকে মাইকেল মধুসূদন স্মৃতি সম্মাননা অর্জন করেন।

আত্মপ্রচার বিমুখ এই সাহিত্য প্রতিভা নীরবে-নিভৃতে নিরন্তর সাহিত্য চর্চা করে চলেছেন।