লেখক সম্পর্কে
আবু জাফর খান
(লেখক, মানবতাবাদী, নন্দনতাত্ত্বিক, সংগঠক ও ফিজিশিয়ান)
নিসর্গের স্বগীয় সৌন্দর্যের পূজারি কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খান ভাঙনকালের তমসায় দাঁড়িয়ে দহনখেয়ায় ভাসতে দেখেন “সোনালি পাখির মায়া”! যেন হেমাঙ্গিনি মেয়ে আবার ফেরে মাটির মায়ার টানে। লেখক আকণ্ঠ ডুবে যাওয়া পঙ্কিল ভূমির বুকজুড়ে ফলিয়ে তোলেন হেম পক্ষীর উড়াল। কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খান এর স্বাতন্ত্র্য এখানেই।
যুগের ভিন্নতর এক ব্যতিক্রমী লেখক আবু জাফর খান।
৩১ জানুয়ারি, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। আকৈশোর মাটির কাছাকাছি ছিল তাঁর বসবাস। দুরন্ত কিশোর গাঁয়ের মেঠোপথের ধারে বসে গোধূলির রাঙা আলোয় পাখিদের নীড়ে ফেরা দেখতেন। জ্যোৎস্নার রুপোলি আলোয় খোলা প্রান্তরে উন্মন ভাবনার পাণ্ডুর রঙে ‘কষ্টের’ রূপ খুঁজতেন। কল্পনায় হারিয়ে যেতেন দূরের অচিন পথে। পাহাড়, নদী, সাগর, অরণ্যের কুহকী ডাকে স্বপ্নিল ঘোরে নিত্য ছুঁয়ে যেতেন নিসর্গের অভাবিত সুন্দরকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যয়নকালে সতত খুঁজেছেন অন্তর্জগতের স্বরূপ। ভাবনার অতলে ডুব দিয়ে অন্তর্গূঢ় রহস্য ভেদের অদম্য আকাঙ্ক্ষায় স্বপ্ন আর শুদ্ধতার নিগূঢ়ে পৌঁছে, বোধির গহনে প্রবেশ করে পরাবাস্তবতার অনিন্দ্যসুন্দর অন্য এক ভুবনের রহস্যদ্বার খুলে যায় তাঁর অন্তর্দৃষ্টির সীমানায়। এভাবেই ক্রমশ তাঁর লেখক হয়ে ওঠা।
তিনি ১৩ বছর বয়সে প্রথম কবিতা লেখেন। স্কুলের দেয়াল পত্রিকায় সেটি প্রকাশিতও হয়। ১৬ বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস রচনা করেন। যদিও সেই পাণ্ডুলিপিটি পরবর্তীতে খোয়া যায়। লেখা এবং লেখার প্রতি অনন্তর ভালোলাগা এবং এভাবেই নির্মিত হয়ে ওঠে অন্য এক রূপময় স্বপ্নিল ও বাস্তব ভাবনার বিম্বিত লেখক সত্তা।
জীবনের প্রাত্যহিকতায় বৃত্তবন্দিজীবন তাঁর একেবারেই ভালো লাগে না। নিসর্গের অভাবিত সুন্দর নিত্য তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। তিনি ক্রমাগত হাঁটতে থাকেন নিরুদ্দেশের অভিযাত্রীর মতো সাগরতটের ভেজাবালিপথ ধরে। তিনি বর্ণ, গোত্র, গোষ্ঠীভেদ মানতে পারেন না। মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব, সমরাস্ত্রের ঝলকানি, কীর্ণ অশান্ত পৃথিবী তাঁকে আহত করে। তিনি প্রতিনিয়ত শান্তিময় পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। মানুষের মনোদৈনতা, অন্তর্গত সংকীর্ণতা, মালিন্য, কৌলুষ, আবিলতা তাঁকে প্রতিনিয়ত ধ্বস্তবিধ্বস্ত করে, বেদনার অতলে ডুবিয়ে দেয়।
লেখক হিসেবে আবু জাফর খান এর বিশেষত্ব, তিনি নিবিড় অন্তর অনুভবে প্রত্যহ ঘটে চলা নানান ঘটনা, জীবনের গতি প্রকৃতি, বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, ব্যক্তিক দহনের সামষ্টিক যন্ত্রণা তুলে আনেন নান্দনিক উপলব্ধির নিপুণ উপস্থাপনায়। তাঁর লেখায় ধ্বনিত হয় বিবেক কথনের অকৃত্রিম প্রতিভাষা। তিনি তাঁর লেখায় প্রতিধ্বনিত করেন নন্দনতাত্তি¡কতায় জীবন বোধের সমকালীন বাস্তবতা।
লেখক আবু জাফর খান জীবনকে দেখেন ভালোবাসা আর মানবিকতার অন্তর আলোয়। তাই তিনি অবলীলায় বলে উঠতে পারেন, ‘ভালোবাসারও নিজস্ব অন্ধকার আছে’!
আবু জাফর খান পেশায় সরকারি চিকিৎসক। ভাবনায় কবি, কথাশিল্পী ও সংগঠক। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে এমবিবিএস এবং নিপসম, ঢাকা থেকে কমিউনিটি মেডিসিনে স্নাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য বিভাগে ডেপুটি সিভিল সার্জন পদে কর্মরত।
এ পর্যন্ত তাঁর ২০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ৯টি উপন্যাস, ৯টি কাব্যগ্রন্থ এবং ২টি গল্পগ্রন্থ। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে বেশ কটি উপন্যাস এবং কাব্যগ্রন্থ দেশে এবং দেশের বাইরে ভারত, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাভাষী পাঠকের মাঝে বিপুল সারা জাগায়; দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন পত্রিকায় আলোচিত ও প্রশংসিত হয়।
বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক অনলাইন সাহিত্য পত্রিক www.poemvein.com এর সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ও ‘বাংলাদেশ কবিতা মঞ্চ’, ঢাকা সাহিত্য সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যে তিনি ‘বাংলাদেশ কবিতা সংসদ’ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক, রবীন্দ্র স্মারক সম্মাননা; আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে কথাসাহিত্যে (বাংলাদেশ) বাংলা সাহিত্য পদক; কোলকাতা থেকে ড. বি আর আম্বেদকর সাহিত্য সম্মাননা; কোলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘চোখ সাহিত্য পত্রিকা’র পক্ষ থেকে ‘চোখ সাহিত্য পদক’; কবি জসীমউদ্দীন পরিষদ কর্তৃক ‘পল্লীকবি জসীমউদ্দীন স্বর্ণ পদক’; পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে ‘নজরুল সাহিত্য স্মৃতি স্বর্ণ পদক’, মাইকেল মধুসূদন একাডেমি, কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে ‘মাইকেল মধুসূদন স্মৃতি সম্মাননা’, নিখিল ভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে (বাংলাদেশ) ‘নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মাননা পদক’ এবং বাংলাদেশ কবিতা সংসদ কর্তৃক কথাসাহিত্যে ‘বাংলা সাহিত্য স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন।